মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জামাতি ভিসি ও আওয়ামী দুদক কর্মকর্তার তুঘলকি কারবার সিলেটে
শেখনিউজ রিপোর্টঃ সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর মোহাম্মদ ইসমাইল পাটোয়ারীর এক চোখা নীতি ও কর্মকান্ডে কুপ্রভাব পড়তে শুরু করেছে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিতে। এমনিতেই ভারতকে সন্তুষ্ট করার নীতি চালু করায় জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে জনগণের মধ্যে স্পষ্ট অবিশ্বাস ও বিরক্তির চিহ্ন ফুটে উঠছে। একই সময় সিলেটের এই জামায়াত ঘরানার ভিসির উদ্ভট ও পাগলামো কর্মকান্ডে ধিক্কার উঠছে।
উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয় চালুর পর থেকে বিভিন্ন ধাপে ২৩৯ জনকে বার বার এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া, এমনকি একসময় তাদের বেতন ভাতা বন্ধ করে দিয়ে বিনা বেতনে খাটানো কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী আমলে দুদকের মামলায় গ্রেপ্তার করানোর জন্য এক অসভ্য খেলায় মেতেছেন। দুদকের মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে চলমান কেউ থাকলেও বা না থাকলেও সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা চার্জশিট দাখিল করতে পারেন কিনা তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে।
নিয়োগ প্রদান করেছেন সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর আর মামলার আসামি হয়েছেন যারা দিনের পর দিন ঘামে শ্রমে বিনে পারিশ্রমিকে চাকুরী করা ৫৭ জন কর্মকর্তা কর্মচারী। যদিও সেই মামলারও কেউ কেউ আবার বর্তমান ভিসির সাহচর্যে বহাল। ২৩৯ জনের বাকিরা ভিসি ও দুদকের তদন্ত কর্মকর্তাকে সন্তুষ্টির বিনিময়ে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছেন।
আজব এক মামলা দুদকের, এপ্রিল ২০২৪ এ। আওয়ামী আমলে। সেই মামলায় আওয়ামী বিরোধী বা আওয়ামী বিরোধী আত্মীয় হিসেবে চিহ্নিতদের বিরুদ্ধেই কেবল ৪২০/৪০৯ ধারার মামলা দিয়ে মহা সমারোহে বর্তমান জামায়াতের ভিসির ইচ্ছায় সেই মামলার চার্জশিট দাখিল করেছে। শুধু তাই নয়, ভিসির নগ্ন ইচ্ছায় তারিখ না থাকা সত্বেও সেই চার্জশিট আদালতে জমা দিয়ে আদালত কর্তৃক গ্রহণ করিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করিয়েছে। অথচ মামলার নিয়মিত তারিখ ছিল জুনের ১১ তারিখে। অভিযোগ রয়েছে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ে কিছু আসামিদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে তাদের এই মামলায় বা চার্জশিটে সম্পৃক্তই করেন নাই।
প্রকাশ সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় যা মরহুম শেখ মুজিবের স্ত্রীর নাম চালু করা হয়েছিল; যার বিপরীতে ২০১৮ সালের ১ অক্টবর আওয়ামী জাতীয় সংসদে সিলেট মেডিকেল কলেজ আইন নাম পাশ হয়। ২০ নভেম্বর আওয়ামী ঘরানার ডঃ মোর্শেদ আহমেদ চৌধুরীকে ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগ দেয় হাসিনা সরকার। ডঃ মোর্শেদ এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ থেকে একজন কর্মচারী এনে দাপ্তরিক কাযর্ক্রম শুরু করেন।
২০২৩ সালে দুই দফায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় এবং ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। তবে এখনো নিয়োগ প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর সাবেক উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার গা ঢাকা দেন। পরে রেজিস্ট্রার ৩০ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেন এবং ৭ নভেম্বর উপাচার্য ক্যাম্পাসে গেলে তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। প্রশাসনের অনুরোধে ১৫ দিনের মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি দাওয়া মেনে নেওয়ার আশ্বাসে উপাচার্যকে ছেড়ে দেওয়া হয়। অস্থায়ী কর্মকর্তা–কর্মচারীদের নিয়োগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন নাজমুল ইসলামকে সভাপতি করে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়।
পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের অনুমোদনক্রমে ৬ ডিসেম্বর অনিয়মিত নিয়োগপ্রাপ্তদের চাকরি নিয়মিত করণের লক্ষ্যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়মিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্ধারিত ১৯ ডিসেম্বরের মধ্যে আবেদনপত্র জমা দেন। পরবর্তী সময়ে ২০২৫ সালের ৩১ জানুয়ারি ও ১ ফেব্রুয়ারি তাঁদের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়।
গত বছরের ২০ ডিসেম্বর সাবেক ভিসি এনায়েত হোসেন পদত্যাগ করেন। চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি নতুন ভিসি হিসেবে জামায়াতের ইসমাইল হোসেন পাটোয়ারী যোগ দেন। তিনি যোগ দেওয়ার পর ১৬ মার্চ অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। ২৩ মার্চের সিন্ডিকেট সভায় তদন্ত কমিটির সভাপতি না থাকায় বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়নি।
কিন্তু বর্তমান ভিসি দায়িত্ব নিয়েই শুরু করেন তার এজেন্ডা। যে কোন ভাবেই হোক সবকিছু বন্ধ করে নিজের লোকদের ভবিষ্যতে নিয়োগের রাস্তা খুলতে শুরু করেন তার খেলা। হাতিয়ারে পরিণত করতে শুরু করেন আওয়ামী দুদকের উদ্ভট মামলা। নিপীড়িত কর্মচারীদের এক তৃতীয়াংশের বিরুদ্ধে দুদকের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলাকে হাতিয়ার বানানোর প্রকল্প পূর্ন উদ্দোমে হাওয়া দিতে শুরু করেন। দুদকের ইজ্জতের ফালুদা বানানো হলেও জামায়াতের ভিসির চাওয়াকে বাস্তবায়ন করতে খাড়া হয়ে যায় দুদকের আওয়ামী ট্যাগ লাগানো কর্মকর্তারা।
হঠাৎ করে দুদকের সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা ইমন আজগুবি মামলার চার্জশিট প্রদান করেন এবং মামলার নির্ধারিত তারিখ থাকা সত্বেও উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিনা তারিখে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়ে আদালত থেকে তা গ্রহণের ব্যবস্থা করানো হয় এবং সকল কথিত আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করানো হয়। যে কারণে সিলেটে চলছে এক ধরণের প্যানিক। আগামীতে হয়তো জামাতি এই ভিসিকে সিলেটে মোকাবেলা করতে হবে ভিন্ন ধারার এক প্রতিবন্ধকতা।
সিলেটবাসীর প্রশ্ন বার বার এডহক ভিত্তিতে চাকুরী দিয়েছেন ভিসিরা কিন্তু চাকুরী পেয়ে কাজ করেছে যারা মাসের পর মাস বেতন না পেয়েও তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা হয় কিভাবে। নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে দুর্নীতি করলে তার দায় নিয়োগকর্তার। নিয়োগপ্রাপ্তদের দোষ কোথায়? দুদকই বা কোন বিচারে ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধেই অস্ত্র বানিয়েছে? কিসের বিনিময়ে? আর যাদের বাদ দিয়েছে সেটিই বা কিসের বিনিময়ে?