সাবেক ও বর্তমান পাকিস্তানের শ্রেণী দ্বন্দ্ব এবং নিম্নবিত্তের উত্থান (২)

 

শেখ মহিউদ্দিন আহমেদ: ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের বিতর্কিত বর্তমান পার্লামেন্ট স্পিকার সুপ্রিম কোর্টকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেই দিয়েছেন নির্বাচন করা যাবে না, তাতে ফল যাই হোক। আইএসআই মহাপরিচালক এবং মিলিটারি গোয়েন্দা প্রধান বৈঠক করেছেন সুপ্রিম কোর্ট এ প্রধান বিচারপতির সাথে; লক্ষ্য একটাই পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখোয়াতে নির্বাচন করা যাবে না। কারণ পরিষ্কার এই নির্বাচন এখন হলে তাতিয়ে থাকা উদীয়মান নিম্ন বিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত সরাসরি ভোট দিয়ে সামন্ত শ্রেণী, শিল্পপতি ও ধর্মীয় গোষ্ঠীর মাফিয়াদের রাজনৈতিক ক্ষমতা শেষ করার ফাইনাল পেরেকটি মেরে দিবে।

পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী রানা তানভীর হুসেন সম্প্রতি লাহোরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্য দেয়ারকালে ঐ প্রতিষ্ঠানের ভাইস চ্যান্সেলর রানা ইকরারকে নিয়ে আক্রমণাত্মক ও তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে মন্তব্য করেন প্রকাশ্যে। তিনি বলেন রানা উপাধির মানুষেরা ক্ষমতাসীন শ্রেণির। এমন উপাধির মানুষ হওয়ার পরও রানা ইকরার বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করছেন এটি তার কাছে অবমানকর মনে হওয়ায় এমন তাচ্ছিল্য তিনি প্রকাশ্যেই করেন।

পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ (আর এক রানা) বলেছেন পাকিস্তানের বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল পিটিআইকে নিষিদ্ধ করা হবে। সম্প্রতি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখোয়া প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন নিয়ে আদেশ দিলে এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সুপ্রিম কোর্টের আদেশ না মানতে প্রয়োজনে দেশে জরুরি অবস্থা জারীর কথা বলেছেন। উদ্দেশ্য একটাই ক্ষমতায় থাকতে হবে।

শিল্পপতিদের প্রতিনিধি শরীফ গং, ভূস্বামীদের প্রতিনিধি জারদারি-ভুট্টো গং এবং মোল্লাদের প্রতিনিধি ফজলু গংরা একাট্টা রাষ্ট্রকে নিজেদের হাতে বিনা নির্বাচনে ধরে রাখতেই হবে। কারণ তারা কনফার্ম যে নির্বাচন হলে তারা ক্ষমতায় ফিরতে পারবে না; যে আমজনতাকে তারা এতদিন নিজেদের প্রজা আর কামলা বানিয়ে রেখেছিল, তারা এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে; ইমরান খান তাদের জেগে উঠতে সহায়তা করেছেন। আর এই ইমরান খানকে রাজনীতিক বানিয়েছিলেন যিনি সেই সেই জেনারেল হামিদ গুলি এখন প্রয়াত। তাই শিল্পপতি-ব্যবসায়ী, ভূস্বামী আর মোল্লাদের বংশধরেরা যারা মিলিটারি আর জুডিশিয়ারিতে বিদ্যমান তারা পাগলা হয়ে সমর্থন যোগাচ্ছে এই তিন লোভী গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের।

এই পাকিস্তানদের প্রতিচ্ছবি এখন পুরো ভারতীয় উপমহাদেশে। অদ্ভুত এক মিল পুরো উপমহাদেশে। ভারতে মোদী তথা ধর্মান্ধ গোষ্ঠী; ভারতে লুটেরা গোষ্ঠী, পাকিস্তানে লুটেরা গোষ্ঠী, শ্রীলংকায় লুটেরা গোষ্ঠী, সবাই যেন একই অপচ্ছায়ার প্রতিচ্ছবি। একই চরিত্র; একই কূর্মকান্ড; একইভাবে সবার ভয় আমজনতাকে নিয়ে। অদ্ভুত একমিল। অথচ এরাই প্রতিটি দেশেই ওপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার বাহানায়; জাতিকে মাদকের মতো তাতিয়ে রাখে অন্যের বিরুদ্ধে।

আজ পাকিস্তান আর বাংলাদেশের মানুষ যদি বুঝতে ব্যর্থ হয় যে তারা আসলে কোন কালেই স্বাধীন হয়নি; তাদের স্বাধীনতার তকমা দেখানো হয়েছে; চোখে প্রলেপ দেয়া হয়েছে; যাতে এই আনন্দেই তারা লুটের সুবিধা করে দেয় ওই গোষ্ঠীগুলোকে যারা সবসময় শুধু পণ্যই হয়; না হয় হতে হয় পণ্যের ক্রেতা। টাকা কিন্তু যায় ক্ষমতাসীনদের পকেটেই। এর পরেও কোন জাতিই জাগবে না।

তবে ক্ষমতাসীনরা এরপরেও একসময় হেরে যাবে যেদিন পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে থাকা সংখ্যাগরিষ্ঠ নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তের সন্তানেরা নিজেদের শ্রেণী মর্যাদা বা অবমাননার বিষয়টি নিয়ে অনুধাবন করবে; সেদিন হবে সত্যিকারের লড়াই। যেমনটি একসময় হবে বাংলাদেশেও। (সমাপ্ত )

translator

 

Double-click

Select to translate

 

 

আরো পড়ুনঃ