৭৫ এবং ২৪ এর দুটো বিপ্লবই এলিটদের দ্বারা কুক্ষিগত হয়েছে: দেওয়ান ইসমাইল
শেখনিউজ রিপোর্টঃ দেওয়ান এইচ এম ইসমাইল, সদ্য সাবেক মহাসচিব, বাংলাদেশ ফ্রিডম পার্টি। প্রাণ বাঁচাতে দীর্ঘদিন নির্বাসিত। দেশে যখন কেউ ফ্রিডম পার্টির নামও উচ্চারণ করতে পারতো না, তখন প্রবাস থেকে ফ্রিডম পার্টিকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন এই দেওয়ান ইসমাইল।
শেখনিউজ ডট কম তার একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। বিস্তারিত নিচে তুলে ধরা হলো।
প্রশ্নঃ বাংলাদেশ এখন ফ্যাসিবাদ মুক্ত, এই সময়টিকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন কৱবেন?
উত্তরঃ বাংলাদেশ এর পূর্বেও ৭৫ এর আগস্টে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সফল বিপ্লব হয়েছিল। সেই সময়েও বিপ্লব জাতির ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারে নাই, কারণ বিপ্লব এলিটদের দ্বারা কুক্ষিগত হয়েছিল। আজকের এই ২৪ এর বিপ্লবোত্তর কালেও একই চিত্র ধীরে ধীরে ফুটে উঠছে। পার্থক্য, ৭৫ এ জাতির নতুন নেতৃত্বের চেয়ে ২৪ এ জাতির নেতৃত্বের বিশালতা ব্যাপক। কিন্তু ফলাফলের উপরেই বিশালতার মাপকাঠি তৈরী হবে।
প্রশ্নঃ ৭৫ এর আগস্টের বিপ্লব হয়েছিল সেনাবাহিনীর সদস্যদের দ্বারা, কিন্তু ২৪ এর বিপ্লব সম্পন্ন হয়েছে সিভিলিয়ানদের দ্বারা। পার্থক্য কি বলে মনে করছেন?
উত্তরঃ মৌলিক পার্থক্য যাই থাকে না কেন, দুটোর আকাংখাই হচ্ছে জাতিকে মুক্ত করা। আর সেই আকাঙ্খা নিয়েই দুটো বিপ্লব ঘটেছে। ৭৫ এ সশস্ত্র বাহিনী জাতির পক্ষে কাজ করেছে, সরকার থেকে নিজেদের স্বত্বাকে সশস্ত্র বাহিনী ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল, যা গত ২০ বছরে সশস্ত্র বাহিনী পারেনি। নিজেদের ফ্যাসিবাদী সরকারের কাছে নতজানু করে দেয়। তাই জাতির সন্তানেরা বাধ্য হয়ে নিজেরাই জাতিকে মুক্ত করতে পদক্ষেপ নেয়।
প্রশ্নঃ কেমন বাংলাদেশ চেয়েছিলেন ২৪ এর মুক্তির পরে? প্রাপ্তি কতখানি?
উত্তরঃ বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার কাজটি শুরু হবে ভেবেছিলাম; কিন্তু বাস্তবতা এখনো ভিন্ন। তবে মুক্তভাবে কথা বলতে পারছি এখনো এটাই যা লাভের, বাকিটা সরকারের উপরে নির্ভর করছে কিভাবে তারা দেশকে পরিচালনা করে।
প্রশ্নঃ সরকারের পারফর্মেন্স কি সন্তোষজনক?
উত্তরঃ: উত্তর দেয়ার মতো সময় এখনো হয় নাই, কারণ দুর্নীতি ঘুষ, চাঁদাবাজি, হয়রানি, আইন শৃক্ষলা পরিস্থিতি কোনটারই বিরুদ্ধে কোন কার্যক্রম নেই। নেই মাদকের বিস্তার রোধে সরকারের পদক্ষেপ। তাই সন্তুষ্টি জানানো হলে সেটাও জাতির সাথে প্রতারণা হবে।
প্রশ্নঃ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ইতিমধ্যেই সরকারের গাঠনিক পর্যায় এবং সংবিধান বহাল থাকা নিয়ে নানান বক্তব্য দিচ্ছেন, এ বিষয়ে আপনার দলের অবস্থান কি?
উত্তরঃ বিপ্লবের পরে ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সংবিধানের বাইরের একটি কাঠামোতে একটি সরকার বানালো যা সংবিধানে নেই কিন্তু তারা সংবিধানের নামেই শপথ নিলেন; এটি বড় ধরণের ভুল, কেউ কেউ যদি এটিকে ধাপ্পা দেয়া হিসেবে বলে তার বিরুদ্ধে সরকারের বক্তব্য কি হবে? আজ কিন্তু আমরা জানি না। এই ভুল সংশোধন না হলে জাতীয় সংকট হবে। আমরা সংবিধান বাতিল করে একটি বিপ্লবী জাতীয় সরকার গঠনের পক্ষে।
প্রশ্নঃ সেই প্রস্তাবিত জাতীয় সরকারের কাঠামো কি হতে পারে? সেটা কি রাষ্ট্রপতি শাসিত নাকি প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকার ব্যবস্থা?
উত্তরঃ যেহেতু সংবিধান বাতিল অবস্থায় হবে, তাই রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বধীন সরকারই উত্তম। ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বেই বিপ্লবী জাতীয় সরকার হতে পারে।
প্রশ্নঃ পুলিশের সংস্কার করে কিভাবে সক্রিয় করা সম্ভব বলে মনে করেন?
উত্তরঃ এই পুলিশকে বিশ্বাস করে বা ভালোবাসে এমন কোন নাগরিক পাওয়া দুস্কর। তার পরেও পুলিশকে প্রয়োজন। পুলিশ বাহিনীকে পুলিশ সার্ভিসে পরিণত করতে হবে। পুলিশের তদন্ত সংস্থাকে পুরোপুরি বিচার বিভাগের অধীনস্ত করতে হবে। তবে ২৪ এর বিপ্লবে হত্যাকারী কোন পুলিশকে এই সার্ভিসে রাখা যাবে না।
প্রশ্নঃ আগামী নির্বাচন কখন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত বলে মনে করেন?
উত্তরঃ সংস্কারের আগে কোন নির্বাচন হওয়া উচিত নয়। রাষ্ট্রের এই জঞ্জাল শুধু হাসিনার সময়েই হয়নি। এটি ৭১ এর পর থেকেই একটু একটু করে তৈরী হয়েছে। জাতীয় স্বার্থ কেউ পুরোটা দেখেনি। রাজনৈতিক সরকার তাদের রাজনৈতিক স্বার্থই দেখবে। এদের দ্বারা রাষ্ট্রের সংস্কার সম্ভব হবে না। তাই সংস্কারের পরেই নির্বাচন হওয়া উচিত।
প্রশ্নঃ ৭৫ এবং ২৪ এর দুটো বিপ্লবের একটি কমন তুলনা করেন।
উত্তরঃ ৭৫ এবং ২৪ এর দুটো বিপ্লবী এলিটদের দ্বারা কুক্ষিগত হয়েছে এবং ফাইনালি জাতি মুক্তির সুযোগ হারিয়েছে।
দেওয়ান এইচ এম ইসমাইল একজন নিবেদিতপ্রাণ জাতীয়তাবাদী ও দেশপ্রেমিক। তবে তিনি বলেন প্রথমে তিনি মুসলিম, এই আইডেন্টিটি তিনি সমুন্নত রাখতে চান। দেশকে ভারতীয় ব্রাহ্মণ্যবাদ ধ্বংস করছে বলে তার অভিমত। তিনি ৭৫ এর আগস্ট বিপ্লবের হিরোদের যারা এখনো জীবিত রয়েছেন, তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার ও দেশপ্রেমিক ছাত্র জনতার প্রতি আহ্বান জানান। সেই সাথে আরেকটি বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থার দ্বারা আগস্ট বিপ্লবের নায়কদের বিচারিক হত্যাকান্ডকে অবৈধ ঘোষণা দেয়ার আহ্বান জানান।