জাতিকে রাজনৈতিক প্রতারনার হাত থেকে বাঁচাতে সংস্কারের পরেই নির্বাচন হওয়া উচিত: গোলাম মোর্তাজা
শেখনিউজ রিপোর্টঃ খোন্দকার গোলাম মোর্তাজা, চেয়ারম্যান ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এনডিপি। ছিলেন একাত্তুরের মুক্তিযোদ্ধা কিন্তু কখনোই সেই মুক্তিযুদ্ধকে ক্যাশ করেন নাই বা আর্থিক লাভবান হওয়ার চেষ্টাও করেন নাই। ছাত্রজীবনে জাসদ ছাত্রলীগের রাজনীতি করায় বাকশালী সরকারের হাতে নির্যাতন ও কারাবরণ করেছেন।
বাংলাদেশ আমলে রাজনৈতিক কারণে ৭ বার কারাবরণ করেছেন। তিনি অবিলম্বে ৭৪ এর বিশেষ ক্ষমতা আইন (ডিটেনশন) ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার এবং ফ্যাসিবাদের ডিজিটাল আইনসহ সকল কালাকালুন বাতিল দাবি করেছেন।
শেখনিউজ ডট কম তার একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। বিস্তারিত নিচে তুলে ধরা হলো।
প্রশ্ন : কেমন বাংলাদেশ চেয়েছিলেন ২৪ এর মুক্তির পরে? প্রাপ্তি কতখানি?
উত্তরঃ আসলেই একটা বৈষম্যহীন বাংলাদেশ যেখানে সকল কালাকানুন মুক্ত একটি সুশাসনের আবহ বিদ্যমান হবে। প্রাপ্তির সবটুকু না হলেও অন্তত মুক্তভাবে কথা বলতে পারছি, বাকিটা বর্তমান সরকারের উপরে নির্ভর করছে তাদের পারফর্মেন্সের উপরে।
প্রশ্নঃ সরকারের পারফর্মেন্স কি সন্তোষজনক?
উত্তরঃ: এখন পর্যন্ত খুশি হওয়ার মতো পারফর্মেন্স নেই, তবে আশাবাদী তারা উৎরে যাবেন।
প্রশ্নঃ আমরা দেখেছি আপনার দল এবং সমমনারা ইতিমধ্যেই সরকারের গাঠনিক পর্যায় এবং সংবিধান বহাল থাকা নিয়ে নানান বক্তব্য দিচ্ছেন, এ বিষয়টি একটু পরিষ্কার করবেন কি?
উত্তরঃ আমরা দেখেছি ছাত্র জনতার বিপ্লবের পরে ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যে সরকারটি দায়িত্ব নিলো তারা সংবিধানের বাইরের একটি কাঠামো গ্রহণ করলো। এমনকি নামটাও সংবিধানের সাথে সম্পর্কিত থাকলো না, কিন্তু তারা সংবিধানের নামেই শপথ নিলেন। এই বিষয়টিকে আমরা অন্যায় না বলে ভুল বলছি যা সরকার ক্রমাগতভাবে বহন করে চলেছে। এখন এই ভুল সংশোধন না হলে জাতীয় ইতিহাস কলংকিত হবে এমনকি এর জের ধরে জাতীয় বিপর্যয়ও হতে পারে। তাই সংবিধান স্থগিত বা বাতিল করে একটি বিপ্লবী জাতীয় সরকার গঠনের কথা আমরা বলছি, যেখানে সশস্ত্র বাহিনীর অংশীদারিত্বও থাকবে।
প্রশ্নঃ সেই প্রস্তাবিত জাতীয় সরকারের কাঠামো কি হতে পারে? সেটা কি রাষ্ট্রপতি শাসিত নাকি প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকার ব্যবস্থা?
উত্তরঃ অবশ্যই সেটি রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বধীন সরকার হবে। শাসিত শব্দ মূলত জাতিকে অবমাননার শামিল। যারা ক্ষমতায় আরোহন করে তারা যদি সেবার পরিবর্তে শাসনের ইচ্ছুক হয় তবে তারা জাতিদ্রোহী। আমরা ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বেই বিপ্লবী জাতীয় সরকার চাই। যারা সকল সংস্কার সম্পন্ন করে রাষ্ট্রকে জাতির কাছে জাতির মালকানায় ফিরিয়ে দিবে কোন গোষ্ঠী বা এলিট ক্লাবের কাছে নয়।
প্রশ্নঃ রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান পুলিশের সংস্কার করে কিভাবে সক্রিয় করা সম্ভব বলে মনে করেন?
উত্তরঃ প্রথমত এই পর্যায়ে পুলিশের মধ্যে যারাই অর্থাৎ যেকোনো স্তরের পুলিশ সদস্য যারাই ২৪ এর ছাত্র জনতার বিপবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে হত্যাকান্ড, নির্যাতন যখম ইত্যাদিতে সরাসরি অংশ নিয়েছে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আন্তে হবে বিচারের জন্য। এরপর পুলিশ বাহিনীকে পুলিশ সার্ভিসে পরিণত করতে হবে। পুলিশের তদন্ত সংস্থাকে পুরোপুরি বিচার বিভাগের অধীনস্ত করে দিতে হবে। পুলিশের এসবিকে গোয়েন্দা বৃত্তির জন্য সরকারের স্বরাষ্ট্র বা প্রধান মন্ত্রী দপ্তরে সংযুক্ত করতে হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের পুলিশকে শান্তি শৃংখলার জন্য স্থানীয় সরকারের অধীনে দিতে হবে।
প্রশ্নঃ আগামী নির্বাচন কখন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত বলে মনে করেন?
উত্তরঃ আগামী সংসদ নির্বাচন অবশ্যই রাষ্ট্রের সকল সংস্কারের পরেই অনুষ্ঠিত হয় উচিত। কারণ রাজনৈতিক সরকার নির্বাচিত হওয়ার পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক স্বার্থ সামনে চলে আসলে রাষ্ট্রের সংস্কার কখনোই সম্ভব হবে না। আমরা রাজনীতির লোকজন এখনো জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে শিখিনি। মুখে বড় বড় কথা বলি আমরা কিন্তু সেগুলো সময়ের আবর্তে ভণ্ডামি হিসেবে চিহ্নিত হয়। তাই জাতিকে সম্ভাব্য রাজনৈতিক প্রতারনার হাত থেকে বাঁচাতে সংস্কারের পরেই নির্বাচন হওয়া উচিত।