ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত ও সৌদি দূতদের নিরাপত্তা বাতিল করেছে সরকার

শেখনিউজ রিপোর্ট: বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত ও সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূতদের নিরাপত্তা সুবিধা তথা সার্বক্ষণিক পুলিশ এসকর্ট প্রত্যাহার করে নিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। এখন থেকে এই সকল দূতগণ আর নিরাপত্তা সুবিধা পাবেন না। সেই সাথে দূতদের গাড়িতে তাদের নিজদেশের পতাকা ব্যবহারও হচ্ছে।

উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিক তার বিদেশ সফরকালে যথাযথ প্রটোকল এবং সমপর্যায়ের নেতাদের সাক্ষাতের পরিবর্তে একধরনের উপেক্ষা পাওয়ার পরেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হলো বলে সরকার সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। যদিও অনেকেই মনে করছেন এটি বিরোধী দলের সাফল্য, কিন্তু সেটিও সঠিক তথ্য নয়। এটি একটি বৈশ্বিক রাজনৈতিক খেলার অংশ হিসেবে একের পর এক ঘটে চলছে।

উল্লেখ্য প্রায় ৩০ বছর আগে ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন এবং ভারতের দূতদের জন্য ওই বিশেষ নিরাপত্তা সুবিধা চালু হয়। পরবর্তীতে কোনো এক সময়ে ওই তালিকায় সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূতকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে অন্য দূতরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে বিশেষ সময়ে ওই সুবিধা গ্রহণ করতেন। রাষ্ট্রদূতদের এসকর্ট সুবিধা প্রত্যাহারের বিষয়টি স্বীকার করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। কেবল এসকর্ট প্রত্যাহারই নয়, রাষ্ট্রদূতদের গাড়িতে ফ্লাগ উড়ানো বন্ধের বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে বলে জানান তিনি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার বলেছেন, এখন কোনো দূতই আর বিশেষ বা স্থায়ী এসকর্ট সুবিধা পাবেন না। সবাইকে এক লেভেলে আনা হয়েছে। ডিএমপি’র ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি জোনের উপ-পুলিশ কমিশনারের অফিস থেকে জানা গেছে, রাষ্টদূতদের এসকর্ট বন্ধ করা হয়নি। শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি ও ভারতের রাষ্ট্রদূতদের যে স্থায়ী এসকর্ট দেয়া হতো সেটি আপাতত বন্ধ করা হয়েছে। রাষ্টদূতরা যখনই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেবেন এবং আমাদেরকে বলা হবে তখনই আমরা এসকর্ট দেবো। ঢাকায় নিযুক্ত সব দূতকে সমান সুবিধা প্রদান করা হবে।

এদিকে, রাষ্ট্রদূতদের এসকর্ট সুবিধা প্রত্যাহার করায় কূটনৈতিক পাড়ায় চলছে নানান আলোচনা।

মার্কিন দূতাবাসের প্রতিক্রিয়ায় জানানো হয়েছে, ‘আমাদের কূটনৈতিক কর্মীদের এবং সুবিধা সমূহের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিনের রীতি অনুযায়ী, আমরা মার্কিন দূতাবাসের নিরাপত্তার বিষয়ে বিশদ প্রকাশ করি না। ভিয়েনা কনভেনশন অনুসারে, অবশ্যই সমস্ত কূটনৈতিক মিশন এবং কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে স্বাগতিক দেশের বাধ্যবাধকতা বজায় রাখতে হবে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেছেন নিরাপত্তার নামে ৪/৫টি দেশের রাষ্ট্রদূত ‘বাড়তি ঢং করছিলেন’। তিনি বলেন, আমি মন্ত্রী, কিন্তু কোথাও পুলিশ এসকর্ট নেই না। এমনকি মফস্বলে গেলেও না। কারণ আমি মনে করি এটি একটি বাড়তি ঝামেলা। বাংলাদেশে রাস্তাঘাটে কিংবা শপিং মলে আক্রমণ করে লোক মারে না। সুতরাং চলাফেরায় কোনো অসুবিধা নাই। তাছাড়া উন্নত দেশগুলোতে এসব ঢং নেই। সবমিলিয়ে আমরা উন্নত হচ্ছি। আমাদের চিন্তা-ভাবনাকে উন্নত করতে হবে। কলোনিয়াল মেন্টালিটি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, ভারত ও সৌদি আরব এই সুবিধা পাচ্ছিল। অস্ট্রেলিয়াসহ অনেক দেশ এই সুবিধা চাইছিল। দিনে দিনে নতুন নতুন চাহিদা বাড়ছিল। আসলে নিরাপত্তা মূল কথা নয়, সামনে পেছনে পুলিশ নিয়ে একটু বাড়তি বাহ্বা নেয়া বা দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য অনেক দূত এই সুবিধাটি চাইছিলেন।

মোমেন আরো জানান, যে সব রাষ্ট্রদূত এমন এসকর্ট নিতে চান তাদের আমরা পয়সা দিয়ে তা নেয়ার জন্য প্রস্তাব করেছিলাম। অনেকদিন আগে থেকে আমরা তাদের এই অফার করছি। সেই সঙ্গে জানিয়েছি আমরা এই সুবিধাটি প্রত্যাহার করতে যাচ্ছি। কিন্তু একজন রাষ্ট্রদূতও পয়সা দিয়ে এসকর্ট সুবিধা নেয়ার প্রস্তাবে রাজি হননি। কোনো মিশন আমাদের চিঠির জবাব দেয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। বলতে গেলে তারা আমাদের পাত্তাই দেয়নি। এক পয়সার দামও দেয়নি।

মন্ত্রী বলেন, একজন রাষ্ট্রদূতকে এসকর্ট করার জন্য পুলিশের কয়েকটি সেট প্রস্তুত রাখতে হয়। তারা পালাক্রমে ডিউটি করে। এতে অনেক খরচ। তবে হ্যাঁ, চাইলে তারা খরচ বহন করে আনসার এসকর্ট নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে আমরা বিষয়টি বিবেচনা করবো। মন্ত্রী বলেন, এখন থেকে সবাই সমান। আর কিছু না হোক আমরা কলোনিয়াল প্র্যাকটিস থেকে বের হতে পারলাম।

যদিও আওয়ামী লীগ সরকার কলোনিয়ান আইনগুলো এখনো পরিবর্তন চাইছে না শুধুমাত্র আমজনতাকে শায়েস্তার রাস্তা খোলা রাখতে।

আরো পড়ুনঃ