ঢাকা অফিসঃ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে রাষ্ট্রপত করে একটি বিপ্লবী জাতীয় সরকার গঠনের দাবী জানিয়েছে যুক্ত ফোরাম বলেছে গঠিতব্য বিপ্লবী জাতীয় সরকার শপথ নিবে জাতীয় শহীদ মিনারে জুলাই-আগস্টের শহীদ পরিবারের সদস্যের কাছে।।
বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে বিপ্লবী সরকার গঠনের রূপরেখা পেশ করেন যুক্ত ফোরামের কেবিনেট প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সমন্বয়ক চাষী মামুন। তিনি লিখিত বক্তব্যে আগামী ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে বিপ্লবী জাতীয় সরকার গঠনের আহবান জানিয়েছেন।
যুক্ত ফোরামের পক্ষ থেকে পেশকৃত রূপরেখায় বলা হয়েছে, বিপ্লবী জাতীয় সরকারের রাষ্ট্রপতি হবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাদের বৈধতার ম্যান্ডেট হবে ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার বিপ্লব। এই সরকারে সশস্ত্র বাহিনীসহ সকল স্টেক হোল্ডার থাকবেন। ফ্যাসিবাদী সংবিধান রহিত করে নতুন সংবিধানের ব্যবস্থা করবেন তারা।
রূপরেখায় আরও বলা হয়, এই সরকার জাতীয় ঐক্য তৈরি করবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে টেকসই গণতান্ত্রিক ধারায় ফেরাবেন। জাতীয় সরকারে থাকবেন অনুর্ধ ৫০ সদস্যের মন্ত্রী সভা এবং একজন উপরাষ্ট্রপতি।
রূপরেখায় যুক্ত ফোরাম বলেছে, বিপ্লবী জাতীয় সরকার-
* নতুন রাজনৈতিক শক্তির বিকাশে হবেন উৎসাহদাতা।
* প্রতিটি মন্ত্রণালয় ভিত্তিক জাতীয় সমন্বয় কমিটি গঠন করবে।
* প্রতি সপ্তাহে উপদেষ্টারা তাদের কাজের অগ্রগতির প্রতিবেদন তুলে ধরবেন জাতির কাছে।
* রাষ্ট্রপতি তার কাজের অগ্রগতির প্রতিবেদন তুলে ধরবেন প্রতি মাসে একবার।
* স্থানীয় সরকারের ক্ষমতা স্থানীয় জনগণের ওপর ন্যাস্ত করবেন, আমলাদের ওপর নয়।
* বিপ্লবী জাতীয় সরকারে মেয়াদ সর্বোচ্চ ৩ বছর হবে। এসময়ে তারা নাগরিক জীবনে স্বস্তি ও নিয়াপত্তা বিধান এবং প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র সংস্কার করবেন।
* নতুন জাতীয় সংসদের মেয়াদ করবেন ৪ বছর।
* ৩ বছর পর পর হবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে। তবে কোনো দলীয় প্রতীক থাকবে না।
* জুলাই-আগাস্ট গণহত্যাসহ দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের সকল খুন, ওম বিচারসহ ফ্যাসিবাদী শোষণ ব্যাবস্থার শেকড় তুলে ফেলবেন।
* একটি সম্মানজনক নাগরিক জীবন এবং ন্যায় ভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যাবস্থা দিয়ে যাবেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে চাষী মামুন বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভেতরেই গদি বসিয়েছে ফ্যাসিবাদীরা। এ যেন বিপ্লবের বসতে ফ্যাসিবাদের বসবাস। তাদের হটাতে হবে, তা-না হলে রাষ্ট্র সংস্কার তো দূরের কথা সামান্য পরিবর্তন আনাও অসম্ভব চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।
প্রধান উপদেষ্টাকে বিশ্ব ব্রান্ড উল্লেখ করে বলা হয়, প্রফেসর ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন সরকার কতিপয় বয়সের ভারে ন্যুজ প্রবীণ ব্যক্তিদের ক্লাবে পরিণত হয়েছে। ফলে বিপ্লবোত্তর সময়ে সরকারের ১০০ দিন পার করেও জাতির প্রত্যাশিত ফলাফল দৃশ্যমান করতে পারেন নি। এর মূল কারণ স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে বিপ্লবোত্তর জাতীয় সরকার গঠন না করা এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে বিপ্লবীদের পরিবর্তে একটি নির্দিষ্ট বিভাগের ইজম ও এলিটদের আধিপত্য।
বিপ্লবী জাতীয় সরকারের রাষ্ট্রপতি ড. ইউনূস হলে কতটুকু সফল হবে বলে আপনারা মনে করেন? প্রশ্নের জবাবে চাষী মামুন বলেন, ‘অবশ্যই দেশে স্থিতিশীলতা আসব, রাষ্ট্রের প্রকৃত সংস্কার এবং যথার্থ উন্নয়ন হবে; এতে কোন সন্দেহ নেই।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্যে যুক্ত ফোরামের কবিনেট সেক্রেটারি এডভোকেট বিপ্লব পোদ্দার জাতীয় সংকট নিরসনে জাতীয় সরকারের গুরুত্বের উপর জোর দেন।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলগুলো ছাত্রদের নেতৃত্বকে সরাসরি বিতর্কিত করে প্রতিপক্ষের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। বিপ্লব অর্জনে সাময়িক ঐক্য হলেও বিপ্লব বাঁচাতে এখন আমাদের ন্যূনতম ঐক্যের আগ্রহ নেই। সেই চিরাচরিত ক্ষমতার গদির জন্যই রাজনৈতিক দলগুলো লেগে পরেছে। তাদের আচরণ এবং কর্মকান্ডে জনগণের আকাঙ্খা এবং বাংলাদেশের টেকসই অগ্রযাত্রার মিশন যেন ফিকে হয়ে যাচ্ছে।
যুক্ত ফোরামের বিপ্লবোত্তর জাতীয় সরকারের দাবী এবং উপস্থাপিত রূপরেখার প্রতি সমর্থন জানিয়ে বক্তব্য দেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও নির্বাচন গবেষক, জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ-জানিপপ এর চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কলিমুল্লাহ। উপস্থিত ছিলেন যুক্ত ফোরামের সমন্বয়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিশ,সাংবাদিক জাকির হোসেন, মাওলানা আশরাফুল হক, সমন্বয়ক দেলোয়ার হোসেন, সমন্বয়ক আলহাজ্ব ফজলুল হক, সমন্বয়ক আবুল কাশেম মজুমদার, সোহেল আহমেদ মৃধা, হাবিবুর রহমান হাবিব প্রমূখ।