কথায় বলে, মাথায় ঢোকা। কিন্তু মনে রাখাটা মস্তিষ্কের একচেটিয়া কোনও বিষয় নয়। নেচার কমিউনিকেশনস পত্রিকায় সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা বলছে, দেহের অন্যান্য কোষও স্মৃতি ধরে রাখতে পারে, শিখতে পারে।
সেলুলার মেমোরি বা কোষের স্মৃতি পুরোপুরি নতুন কোনও বিষয় নয়। গবেষণাটিতে পরখ করে দেখা হয়েছে মস্তিষ্ক ছাড়া অন্যান্য কোষের স্মৃতিতে ‘মাসড স্পেসড এফেক্ট’-এর প্রভাব। কোনও কিছু টানা পড়ে গেলে যতটা মাথায় ঢোকে, সেটাই সময় ভেঙে একটু-একটু করে পড়লে আরও ভাল মনে থাকে। এটা ঘটে ‘মাসড স্পেসড এফেক্ট’-এর ফলে। মস্তিষ্কের কোষের এই ধর্ম মানুষের শরীরের অন্যান্য কোষে কী ভাবে কাজ করে, সেটাই পরীক্ষা করে দেখেছেন ওই বিজ্ঞানীরা। গবেষণার তত্ত্বাবধান করেছেন নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিদ্যার ক্লিনিক্যাল অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর নিকোলাই ভি কুকুশকিন এবং সেন্টার ফর নিউরাল সায়েন্সের প্রফেসর টমাস কারু।
কুকুশকিনরা গবেষণার জন্য দু’টি কোষ নিয়েছিলেন। একটি স্নায়ু থেকে, একটি কিডনি বা বৃক্ক থেকে। প্রযুক্তির মাধ্যমে এমন বন্দোবস্ত করেছিলেন, যাতে মস্তিষ্কের মতো ‘মেমোরি জিন’ সক্রিয় হলে কোষগুলি সেটা উজ্জ্বল প্রোটিন গঠন করে জানান দেয়। তাঁরা লক্ষ করেছেন, কোনও সঙ্কেত টানা পাঠানোর বদলে নির্দিষ্ট সময় অন্তর অনেক বারে পাঠালে স্নায়ু এবং বৃক্কের কোষেও মেমোরি জিনের সক্রিয়তা বাড়ছে। কুকুশিন বলেন, “দেখা যাচ্ছে যে, নির্দিষ্ট ব্যবধানে পুনরাবৃত্তি থেকে শিখতে পারা মস্তিষ্কের কোষের নিজস্ব কোনও ব্যাপার নয়, সেটা সম্ভবত সব কোষেরই মৌলিক ধর্ম।”
ওই বিজ্ঞানীদের মতে, কোষের এই ধর্ম কাজে লাগিয়ে সেই অনুযায়ী তার প্রতিক্রিয়া আদায় করা যেতে পারে। এ ভাবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন দিশাও মিলতে পারে ভবিষ্যতে। কুকুশিনের বক্তব্য, “স্মৃতি বিষয়টা কী ভাবে কাজ করে, সেটা বোঝার নতুন পথ খুলে দিচ্ছে এই গবেষণা। ভাল করে কিছু শেখা বা স্মৃতির সমস্যার সুরাহায় এটি কাজে আসতে পারে। পাশাপাশি, এই গবেষণা ইঙ্গিত দিচ্ছে, ভবিষ্যতে পুরো শরীরটাকেই অনেকটা মস্তিষ্কের মতো করে দেখতে হতে পারে
আমাদের। যেমন ধরুন, রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখবে কী ভাবে, সেটা অগ্ন্যাশয় যদি খাওয়াদাওয়ার ধরণ থেকে বুঝে নিয়ে সেই অনুযায়ী কাজ করে চলে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)