বর্তমান যুগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। তবে, এআই-এর সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ করা উচিত তা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন থাকে। সম্প্রতি করা এক গবেষণায় এআই সিস্টেমগুলোর সঙ্গে ভদ্র আচরণের বিষয়টি বিজ্ঞানসমর্থিতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, যন্ত্রের সঙ্গে নম্র আচরণ করলে শুধু এর কাজের মান বৃদ্ধি পায় না, বরং এটি আমাদের নেতৃত্বের দক্ষতা বাড়ায় এবং আবেগীয় বুদ্ধিমত্তাও উন্নত করে।
এআই-এর সঙ্গে ভদ্রতার সম্পর্কের দিকে নজর দিলে দেখা যায়, শুধু শিষ্টাচার বজায় রাখলে এআইয়ের পারফরম্যান্সের উন্নতি ঘটে এবং কর্মস্থলে ইতিবাচক সংস্কৃতি তৈরি হয়, যা বিশেষ করে নেতাদের জন্য একটি শক্তিশালী দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাজের মানের সঙ্গে ভদ্রতার সম্পর্ক
শুধু যন্ত্রের সঙ্গে শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত সম্পর্ক তৈরি করা যথেষ্ট নয়; আমাদের আচরণও গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় বিজ্ঞানসমর্থিতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, এআই সিস্টেমগুলোর সঙ্গে ভদ্র আচরণ করার মাধ্যমে আমরা দুটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা অর্জন করতে পারি। প্রথমত, যন্ত্রের প্রতি নম্র আচরণ করলে এআইয়ের আউটপুটের মান উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। দ্বিতীয়ত, এটি আমাদের নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতাও উন্নত করে।
নম্র আচরণ করলে এআই তুলনামূলক ভালো কাজ করে
গবেষণায় দেখা গেছে, যন্ত্রের সঙ্গে নম্র আচরণ শুধু শিষ্টাচারই নয়, এটি এআইয়ের কার্যক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ায়। ইংরেজি, চীনা ও জাপানি ভাষায় পরিচালিত একটি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে- অভদ্র ভাষায় এআইয়ের প্রম্পট দেওয়া হলে তার কার্যক্রম দুর্বল হয়ে পড়ে। এই ধরনের নির্দেশনায় ভুল এবং পক্ষপাতমূলক তথ্যের পরিমাণ বাড়ে, অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাদ পড়ে যায়, এবং ভুল ফলাফল সৃষ্টি হয়।
গবেষকরা যখন সারাংশ লেখা বা ভাষা বুঝতে পারার মতো বিভিন্ন মানদণ্ডে এআই সিস্টেমগুলো পরীক্ষা করেছিলেন, তখন তাঁরা ভদ্র থেকে শুরু করে অভদ্র ভাষা পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের প্রম্পট ব্যবহার করেন। ফলাফল খুবই আশ্চর্যজনক ছিল: ভদ্র ভাষায় দেওয়া প্রম্পটগুলোর ফলাফল ছিল অভদ্র ভাষায় দেওয়া প্রম্পটগুলোর তুলনায় অনেক ভালো। অভদ্র প্রম্পট ব্যবহারের কারণে কিছু কিছু এআই মডেলের কার্যক্ষমতা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গিয়েছিল।
এই গবেষণার ফলাফল দেখায় যে, এআই সিস্টেমের প্রতি শিষ্টাচারের ব্যবহার শুধুমাত্র ভালো আচরণের লক্ষণ নয়, বরং এটি ফলপ্রসূ এবং সঠিক আউটপুট পাওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষণাটি আরও প্রকাশ করেছে, এআই মডেলগুলো সংস্কৃতি অনুযায়ী সূক্ষ্ণভাবে ভদ্র আচরণের প্রতি সাড়া দেয়। এ থেকে বোঝা যায় যে মানুষে মানুষে আলাপ-আলোচনার মতোই এআইয়ের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগের ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
যন্ত্রের সঙ্গে ভদ্রতা বাস্তবেও প্রতিফলিত হয়
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা এআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগের সময় পেশাগত শিষ্টাচার বজায় রাখেন, তারা মানুষের সঙ্গে মেলামেশার সময়ও শক্তিশালী আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা প্রদর্শন করেন। এআইয়ের সঙ্গে ভদ্র আচরণ করলে আমাদের মস্তিষ্কের সেই অংশগুলি সক্রিয় হয়, যেগুলি সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখতে সহায়তা করে। এর ফলে আমাদের নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা আরও উন্নত হয়।
ভেবে দেখুন, যদি আপনি চ্যাটজিপিটিকে দিয়ে কোনো কাজ করানোর সময় খিটিমিটি করেন, তাহলে কাজের চাপের মধ্যে কীভাবে আপনার সহকর্মীদের সঙ্গে ধৈর্য ও সম্মান বজায় রেখে কাজ করবেন? যখন আপনি এআইয়ের সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ করেন, এটি আপনার সামগ্রিক আচরণ এবং সম্পর্কের দক্ষতাকে আরও শক্তিশালী করে।
এআই প্রযুক্তিগত এবং বিশ্লেষণধর্মী কাজের জন্য ব্যবহৃত হলেও, আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা এবং আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্কের দক্ষতা এখনো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরনের সম্পর্কের উন্নতি আমাদের সমালোচনামূলক দক্ষতা বাড়াতে সহায়তা করে, না যে তা নষ্ট করে। জার্নাল অব অ্যাপ্লায়েড সাইকোলজির একটি গবেষণায় দেখা গেছে, রূঢ় আচরণ কর্মস্থলে ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়ে। যখন কোনো নেতা এআইয়ের সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ করেন, তখন তিনি তার কর্মীদের কাছে উদাহরণ সৃষ্টি করেন, যা প্রতিষ্ঠানে একটি ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি করে।
এআইয়ের সঙ্গে ভদ্র আচরণের সুফল নিয়ে যে তথ্য-উপাত্ত রয়েছে, তা বেশ চমকপ্রদ। যেসব কোম্পানি এআইয়ের সঙ্গে সম্মানজনক আচরণে গুরুত্ব দিচ্ছে, তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের মধ্যে দলীয় সহযোগিতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, গ্রাহকসেবার মান উন্নত হচ্ছে এবং নতুন প্রযুক্তি গ্রহণে আরও সহজতা দেখা যাচ্ছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো ইতিবাচক করপোরেট সংস্কৃতি তৈরি করছে, যা মেধাবী কর্মীদের আকর্ষণ এবং তাদের ধরে রাখতে সাহায্য করছে। অতএব, চ্যাটজিপিটি বা অন্যান্য এআই সিস্টেমের সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ শুধু ভাল ফলাফলই দেয় না, বরং দীর্ঘমেয়াদে লাভজনকও প্রমাণিত হয়।
সূত্র : ফোর্বস