শেখনিউজ রিপোর্টঃ ঝিমিয়ে পড়া, নতজানু জাতির মধ্যেও মাঝে মাঝে নাড়া পড়ে। রাষ্ট্রের উদাসীনতায় দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদকের কর্মকর্তারা আসল অপরাধীকে টাকার বিনিময়ে আড়াল করতে এক পাটকল শ্রমিক জাহালামকে ৩৩ টি মামলা দিয়ে জেলে পাঠায়। তিন বছর বিনা দোষে জেলে থাকার পরে হাইকোর্টের দয়ায় জাহালাম মুক্তি পায়।
হাইকোর্টের এই দয়া জাগ্রত হয় ‘প্রথম আলো’ পত্রিকার একটি রিপোর্টের ভিত্তিতে। অথচ প্রতিবছর বিভিন্ন কমিটি এবং সংস্থা প্রতিটি কারাগার পরিদর্শন করে, বন্দীদের কথা শোনে এবং এর প্রেক্ষিতে রিপোর্ট দেয়। এই তিন বছরে কি কারাগার পরিদর্শন হয়নি? কারো কলম বা বিবেক কি এই সকল জাহালামদের কাছে পৌঁছায়নি? নাকি সবাই বধির বা কানা ছিলেন রাষ্ট্রের মতই।
যাক অবশেষে হাইকোর্ট তাকে মুক্তি দিয়েই তাদের কর্তব্য থেকে খালাস; কিন্তু দোষীদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিয়েছে আদালত? মানুষ হিসেবে জাহালামকে কোন ক্ষতিপুরনের আদেশ দেয়নি কেন আদালত? নাকি আদালতের ঐ এখতিয়ারের জায়গাটি বন্ধ হয়ে গেছে রাষ্ট্রীয় দুরাচারদের কারনে?
কেউ যখন জাহালামের জীবনের এই ক্ষতির কিছুটা হলেও আর্থিক সহায়তার জন্য মুখ খোলেনি তখন শেখনিউজ ডট কমের প্রধান সম্পাদক শেখ মহিউদ্দিন আহমেদ (বাংলার ভুমিপুত্র) তার ফেসবুক একাউন্টে এ বিষয়টি তুলে ধরেন।

অবশেষে বাংলাদেশে একটি সামাজিক সংগঠন এ বিষয়ে রাজপথে নেমে এসেছে। আজ ৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ‘সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন’ নামে একটি সংগঠনের মানববন্ধন থেকে তিপূরণ হিসেবে টাঙ্গাইলের জাহালমকে ১০ কোটি টাকা দেওয়ার দাবি উঠেছে।
মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস।
তিনি বলেন, “দুর্নীতি দমন কমিশনের বিচারে নিরীহ জাহালম তার জীবন থেকে ও পরিবার-পরিজন থেকে গত ৩ বছর বঞ্চিত ছিলেন। মহামান্য হাই কোর্টের নির্দেশনায় তার মুক্তি মানবিকতার ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
“আমরা মনে করি ৩ বছরের অমানবিক আচরণের কারণে তার পরিবার পরিজনের যে বঞ্চনা, তার ক্ষতিপূরণ ১০ কোটি টাকা দুর্নীতি দমন কমিশনকে দিতে হবে।”
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতি জিয়াউদ্দিন তারেক আলী বলেন, “রাষ্ট্র এবং দুদক কেউই জাহালমের উপর যে নির্দয় ও অমানবিক আচারণ তা এড়িয়ে যেতে পারেন না। আমরা জাহালমের উপর এই অন্যায়ের প্রতিকার দাবি করছি।”
সভায় ঘোষণাপত্র পাঠ করেন সংগঠনের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মামুনুর রশীদ।
এতে বলা হয়, “নির্দোষ জাহালমের জেলে যাওয়া ও তিন বছর কারাগারে থাকার ঘটনায় দুদকের মতো একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান যেমনটি করে প্রশ্নবিদ্ধ হলেন, তেমনি সোনালী ব্যাংক ও একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান কী করে সালেকের পরিবর্তে জাহালমকে দোষী হিসেবে সাব্যস্ত করলেন, তা আমাদের বোধগম্য নয়। এ বিষয়ে দেশবাসীর সামনে অনেকগুলো প্রশ্ন এসে হাজির হয়েছে।”
এই মামলায় মূল আসামিকে আড়ালে রাখার কোনো প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে জাহালমকে ফাঁসানো হয়েছিল কি না, তা তদন্ত করে দায়ীদের শাস্তি দাবি করেছে সামাজিক আন্দোলন।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী এস এম এ সবুর, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ কে আজাদ, সানোয়ার হোসেন সামছী, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সবুজ প্রমুখ।